(Hooligan on Hill Track-পাহাড়ের পথে-৪ এরপর..) তো আমরা খাবার শেষে সিষ্টেম থেকে বের হলাম.. আরেক রাউন্ড চা-বিড়ি আর হুল্লোড় চললো.. তবে সবার শরীর মোটামুটি ঠান্ডা মেরে গেছে সিস্টেমের ওহি খাবার পর। আমরা শহর থেকে বের হয়ে পেট্রল পাম্পে এসে আবার থামলাম.. যার যার দরকার সবাই পেট্রল ভরে নিলাম। পরে বুঝেছি একদম বাজে তেল সেই পাম্পের।
যাহোক আবারো সবার দড়িছাড়া গরুর মতো অবস্থা.. কেই ছবি তোলে, কেউ শি-দেয়, পানি খায় আর বিড়ি তো চলছেই.. আসলে যেহেতু আর অন্য কোন দিকে যাচ্ছিনা তাই ৭০কিমি দুরের রাঙ্গামাটি আর আমাদের গায়েই লাগছে না.. তো শেষে আবার আমরা গা ঝাড়া দিয়ে উঠলাম। কারন আগে থেকেই এই রাস্তাটার একটু বদনাম আছে.. আমার অনেক বছর আগের কথা মনে পড়ে গেল।
এইদিকে বেলা তিনটা পার হতে চললো.. তো আমরা আবার রাঙ্গামাটির পথ ধরলাম.. পথে নামতেই সবাই বুঝলাম আসলে আমরা দেরি করে ফেলেছি.. কারন পাহাড়ে আগেই সূর্যের আলো কমে যায়.. আর রাস্তার সারফেস গাছের ছায়ায় আর দেখা যায় না।
তো আমরা মোটামুটি হুল্লোড় টান দিলাম.. কোন থামাথামি নেই.. মহালছড়ি পার হবার পর সবাই মোটামুটি মনে হয় জ্বর নামলো.. কারন ট্যুরের আগেই আলোচনায় যে জায়গাগুলোর নাম নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি তার মধ্যে অন্যতম রিস্কি জায়গা এই মহালছড়ি..
মহালছড়ি পার হবার পর আমরা থামলাম.. সবাই যেন হাঁফ ছাড়ার জন্যে থামতেই চাইছিলো.. তাই সবার ভীত মুখেই নিশ্চিন্ত হবার হাসি.. আরো ৩৫-৪০কিমি পথ আছে তবে বেশি দুধর্ষ জায়গাটা আমরা পার করে ফেলেছি দিনে আলোতেই.. এবার বিড়ি ধরিয়ে সবারি সেই গল্প.. কে কতোটা ভয় পেয়েছে.. আসলে ভয়ের বেশ কিছু বিষয় থাকলেও বলা যায় ভয়ের তেমন কিছু নেই।
তবে এই জায়গাতে বাঙ্গালিদের গা-এলিয়ে না চলাই ভালো.. এবার এডভোকেট মাশুক ভাইয়ের আব্দার চা খেতে হবে.. যথারীতি জুন ভাই আবার ভয় দেখালেন.. চা খেতে যেয়ে আবার অপহরন হতে চান! আর কোথায় যায়.. মাশুক ভাইয়ের চা হজম..!! পরে চা খাওয়ানোর কথা দিয়ে জুন ভাই বিড়ি খেতে বললেন..
তো আবার চলা শুরু.. এই ফাঁকে বলে নেই.. আমরা বারবার থেমেছি কারন আমাদের অনেকেরই পাহাড়ে বাইক নিয়ে এবারই প্রথম আসা.. অনেকেই এর পারিপাশ্বিকতা সমতলের মতোই মনে করতে পারি.. কিন্তু আসলে সমতলের সাথে এর অনেক পার্থক্য। সামান্য ভুল, একটু ক্লান্তি, একটু ভুল দেখা অথবা একটু ওভার কনফিডেন্স আমাদের মতো নতুনদের জন্যে বিপদ বয়ে আনতে পারে।
আর আমরা নয়জন লম্বা পথের প্ল্যান নিয়ে এসেছি.. আমাদের সামান্য ভুল করার কোন ইচ্ছেই ছিলো না.. ট্যুরের আগে আমরা এই বিষয়গুলো খুব ভালোভোবেই অলোচনা করে নিয়েছিলাম.. ফলত: শেষ পর্যন্ত খুব ভালোভাবেই আমরা পুরো পথ নিরাপদে ভালোভাবে মজা করতে করতে শেষ করেছি.. আর আজ কয়েকবছর পর সেই গল্প মনে করতে পারছি..
তো রাঙ্গামাটির পথে চলা শুরু করতেই দেখা গেল আলো আরো কমে আসছে তবে রাস্তা দেখা যায়। যদিও সূর্যাস্তের দেরী আছে তবু পাহাড় আর বনানীর ছায়ায় সব অন্ধকার লাগে। তার উপর এরপর রাস্তার বাঁক আরো বেড়ে গেলো.. রাঙ্গামাটির মানিকছড়ির আগে পুরো অন্ধকার হয়ে আসলো.. আর এখানেই বাঁকে বাঁকে অপরদিকের যানবাহন দেখার জন্যে রাস্তার পাশে আয়না বসানো। বুঝলাম বিপদজনক অঞ্চল.. তাই সবাই হর্ন দিয়ে সাবধানে টানতে লাগলাম।
সেই সময় মহালছড়ির মোটামুটি ২০কিমি পর থেকে রাঙ্গামাটির মানিকছড়ি পর্যন্ত অনেকগুলো আর্মি ক্যাম্প আর চেকপোষ্ট ছিলো। এই এলাকা তখন অনেক গরম ছিলো.. মারামারি কাটাকাটি লেগেই ছিলো বাঙ্গালী আর ণৃগোষ্ঠীর মাঝে। তো একে একে আমরা সব ক্যাম্পই পার করে আসলাম। যে কারনেই হোক মানিকছড়ির একটা ছাড়া আর কোন চেকিং এর মধ্যে পরিনি.. মনে হয় খাগড়াছড়ির লাষ্ট চেকপোষ্ট থেকেই সব ক্যাম্পে আগেই জানিয়ে দিয়েছে আমাদের বিষয়ে।
তো এবারও রাঙ্গামটিতে ঢোকার সময়ে আমার সেই অনুভুতি জেগে উঠলো.. ইশ্ কতো দিন পর আসলাম আবার সেই রাঙ্গামাটিতে আর এবার আমার ঘোড়ায় চেপে.. হাহ হাহ হা.. রাঙ্গামটি শহরের বুক ফুড়ে এঁকেবেঁকে উঁচুনিঁচু সেই রাস্তা বেয়ে আমরা সেই নয় দস্যু গিয়ে হাজির হলাম শহরের শেষে পর্যটনের নতুন বিল্ডিংয়ে.. বাইক থেকে নেমে আমাদের সেকি উল্লাস!
আর অবাক করা বিষয় হলো পাহাড়ী পথে ভেবেছি বুঝি সন্ধ্যা হয়ে গেলো.. আসলে সন্ধ্যা হয়ইনি। তখনো বেশ আলো ছিলো.. আর আমরা সেই আলোয় চরম হই হুল্লোর শুরু করে দিলাম.. আর নতুন বিল্ডিং বলে সেখানে আর কোন অতিথি নেই.. ফলে আমরা পুরো লনে হুল্লোড় করে বেড়ালাম.. হাহ্ আজো সেই সময়গুলোর ছবি আমার সাথে কথা বলে.. আমি সেই দিনগুলোতে অনায়াসে ঢুকে পড়ি.. খুবই ভালো লাগে..
তো বাইক নিচের লনে পার্ক করে আমরা লাগেজ খুলে নিয়ে দোতলায় যার যার বরাদ্দকৃত রুমে ঢুকে পড়লাম.. আমি, ওয়াসিফ আর জহির ভাই এক রুমে.. গোসল-টোসল সেরে সবাই ফ্রেস হয়ে নিলাম.. এই সময়ে আসলো আমার বসের ফোন.. যিনি ফোন করলে আর ছাড়তে চাননা..
আমি আমাদের রুমের পেছনের ব্যালকনিতে গিয়ে ফোন ধরলাম.. কিছু ধুপধাপ চাপা মেরে বাজে নেটওর্য়াকের দোহাই দিয়ে পরে ফোন দিবো বলে ফোন ছাড়লাম.. কারন বস জানেনা আমি বাড়ির কাজে না রাইডের কারনে অফিসের বাইরে.. হাহ হাহ হা.. সব মগা.. এদিকে ব্যালকনি থেকে দেখা গেল কাপ্তাই লেকের ওপারে বেশ বড়ো চাঁদ..
তো সবাই ফ্রেস হয়ে এবার রাতের খাবারের পালা.. আমি আমার সব গিয়ার চার্জে দিয়ে সবার সাথে নিচে নেমে গেলাম.. আশে পাশে ভালো কোন রেস্টুরেন্ট নেই.. কোন রকমে একটা রেস্টুরেন্টে আমরা খাবার সেরে ঝালের চোটে শোঁশাঁতে শোঁশাঁতে পানের দোকানে দাড়ালাম। জুন ভাই মাশুক ভাইয়ের মহালছড়ির ডিউ চা খেতে ডাকলেন.. সেখানে চা বিড়ি আর পানের সাথে আরেকধাপ গল্প আর হুল্লোড়..
তারপর আমরা যার যার মতো হোটেলে ফিরে চললাম। পথে দলছাড়া হয়ে আমি মাশুক ভাই আর কে যেন পুলিশ সার্জেন্টের পাল্লায় পড়লাম। ব্যাটার সেই ঝাড়ি.. এটা আপনারা ঢাকা পাইছেন.. জানেন এটা কোন এলাকা.. গায়েব হয়ে যাবেন ইত্যাদি..ইত্যাদি। কই আপনাদের কাগজ কই..
এদিকে আমরাও এককাঠি সরেস হয়ে দাবড় দিলাম যে আপনাকে এতো খবরদারি করতে হবে না.. আমরা আমাদের নিরাপত্তা বুঝি.. আপনে আপনার ডিউটি করেন। আর আমরা কাগজ ছাড়া এতোদুরে ঘুরতে আসিনি.. সার্জেন্ট আমাদের গলার জোরে একটু গলা নামিয়ে ফেললো.. বললো দেখেন আপনারা দুর থেকে আসছেন.. এতো রাতে বাইরে ঘোরাঘুরি না করাই ভালো.. তো আমরা আর কথা না বাড়িয়ে হোটেলে চলে গেলাম..
সবে মাত্রে সাড়ে আটটা বাজে.. জুন ভাই আর মারুফ ভাই আবার গেল আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে.. কারন কাল ভোরের আগেই আমরা কাপ্তাই হয়ে বান্দরবনের পথে বের হবো। তো জুন ভাই আসার আগেই আমরা বাকি বাইকগুলো সব কারশেডের নীচে নিয়ে এসে একসাথে লক করে রাখলাম..
বেশ আশংকাই হলো যে কেউ আবার বাইকগুলো গায়েব করে না দেয়.. কারন নতুন বিল্ডিং হবার কারনে এই এলাকা একদম জনশুন্য আর গার্ড মাত্র একজন.. মাতাল মাস্তানদের দল এলে ওই একটা গার্ডের আসলে কোন মুল্যই নেই.. আর ভয়টা বেশি জহির ভাই আর রনি ভাইয়ের নতুন কেনা R15 ও FZ-S আর মাশুক ভাইয়ের ফেজার নিয়ে.. কারন তাদের বাইকগুলো একদম নতুন.. হাহ হাহ হা..
যা হোক আমরা একাধিক লক একটা আরেকটার সাথে বেধে বাইকগুলো রেখে দিলাম.. আল্লাহ ভরসা.. এতো ভয়ের আসলেই কিছু নেই.. আমরা নতুন ছিলাম.. তাই আমাদের ভয়ও ছিলো বেশি। আর আজকের এই সময়ে ওইসব জায়গা এখন আমুল বদলে গেছে.. নিরাপত্তা নিয়ে তেমন চিন্তাই নেই।
যা হোক সবাই যার যার মতো শুতে গেলাম কারন কাল অন্ধকার ভোরে আবার আমাদের বের হতে হবে.. তাই ঘুম দরকার.. আর সবাই খুবই ক্লান্ত.. তাই আমরা মড়ার মতোই ঘুমালাম.. তবে ঘুমানোর আগে অবশ্যই সামনের বারান্দায় আরেক রাউন্ড বিড়ির হুল্লোড় হয়েছিলো যেটা মাশুক ভাই আর সাইদ ভাই মিস করেছে..
(চলবে).. (Hooligan on Hill Track-পাহাড়ের পথে-৬)