Hooligan on Hill Track-পাহাড়ের পথে-৭

(Hooligan on Hill Track-পাহাড়ের পথে-৬ এরপর..) বান্দরবন থেকে এবার আমাদের পরবর্তী গন্তব্য থানচি যেটা আমাদের আজকের যাত্রার ডেড-এন্ড। শুনলাম বান্দরবন থেকে থানচি পর্যন্ত পুরোটাই একদম পাহাড়ী পথ আর তারপর নদীপথে রেমাক্রি..  আর সুযোগ হলে নাফাখুম।

যদিও নাফাখুম আপাতত সাজেকের মতোই আমাদের মুল প্লানের বাইরে.. তো থানচি থেকে রেমাক্রি যেতে হবে সাঙ্গু নদী বেয়ে.. আর এই জন্যে প্রশাসনিক নিয়ম আছে স্থানীয় গাইড নেয়ার। আর রেমাক্রিতে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে পেট্রো এভিয়েশন নামের এক ট্যুর অপারেটরের কটেজে।

bandarban-general-hospital-hooligan-in-hill-track

তো আমাদের গাইডকে ফোন দিলো জুন ভাই.. সেই সাথে পেট্রো এভিয়েশনের এদিকের অপারেটর সাইফুল ভাইকে (পরে থানচিতে দেখা আর পরিচয় হয়েছে)।জানা গেল আমাদের গাইড শচীন আবার থানচিতে নেই.. সে কোন কাজে বান্দরবনের দিকে এসেছে.. আর তাকে পথ থেকে তুলে নিয়ে আমাদের সাথে থানচিতে নিয়ে যেতে হবে..

তো আমরা বান্দরবনের কোন এক জায়গা থেকে মনে হয় নীলগিরি থেকে (কোন জায়গা ঠিক মনে নেই) গাইডকে লোকেট করে তুলে নিয়েছিলাম.. খুব সম্ভবত মারুফ ভাই এই গাইডকে পেছনে বসিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহসটা করেন.. আমার ঠিক স্পষ্ট মনে নেই..

bandarban-general-hospital-joe-outlaw

যাহোক আবার শুরু হলো সেই উদ্দাম পাহাড়ী পথে আমাদের ধেয়ে চলা.. এই রাস্তাটা আসলেই এক অন্য ধরনের রাস্তা। এখন তো সবাই সেই পথ খুবই ভালো করে চেনেন.. কিন্তু কয়েকবার যাবার পর আজও রাস্তাটা আমার কাছে নতুনই লাগে..

সেই রাস্তার সবুজ চারপাশ, পাহাড়ের পিঠ চিড়ে যাওয়া পিচ রাস্তা, মাথার উপর কড়া নীল রঙের বিশাল  আকাশ, চরম নি:শব্দে বাতাস আর প্রকৃতির একান্ত নিজের শব্দ, চরম চড়াই উৎড়াই, ভেজা বাতাস আর অনবদ্য এক ঘ্রান.. সব মিলিয়ে সে এক অন্যরকম অনুভুতি।

bandarban-peak-69-joe-outlaw

তো বান্দরবন থেকে সকাল সাড়ে আটটায় বেরিয়ে একটানে Peak 69 এর একটু আগে এসে আমরা থামলাম। বেলা সাড়ে নটা বেজে গেছে। পরে জেনেছি পথে মিলনছড়ি আর চিম্বুক বলে দুটি জায়গা ছিল থামার মতো, সেখানে আমরা থামিনি কারন তাতে রেমাক্রি যেতে দেরী হবে।

তবে মিলনছড়ির ওই দিকে ওয়াসিফের বাইকের চাকার বাতাস কমে যাওয়ায় আমাদের একটু থামতে হয়ে ছিলো। তখন আমার বয়ে নিয়ে যাওয়া ফুট-পাম্পার দিয়ে ওর চাকায় বাতাস দিতে হয়েছিলো.. পরে জানতে পারি ওই জায়গাটাই ছিলো মিলনছড়ি..

bandarban-peak-69-saleh-md-hassan

তো আমরা Peak 69 এর ওদিকে থেমে যথারীতি রেষ্ট, বিড়ি, গল্প, ছবি তোলা যা খুশি করলাম.. ছবি তুলতে গিয়ে যে পথে আমরা এসেছি তা ক্যামেরায় জুম করে দেখলাম অনেক নীচে.. হায় হায় আমরা এতো নীচ থেকে পাহাড় বেয়ে উঠে এসেছি! আর চারপাশের কথা কি বলবো.. তা আসলে ভাষায বলা সম্ভব না.. ছবিতে কিছুটা হয়তো বোঝা যায়.. তবে নিজের চোখে না দেখলে কিছুই অনুভব করা সম্ভব না..

তো আবার শুরু হলো পাহাড়ের সেই ভয়ঙ্কর সুন্দর পথে মোটামুটি মটোজিপি আপহিল রাইড.. কারন আমরা সবাই এই রাস্তায় মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমাদের সবারই বাইকের চাকার দুইধার লক্ষ্যনীয় ভাবে ক্ষয়ে গেছে আপহিল আর ডাউনহিল বাঁকগুলো ট্যাকল করার কারনে..

peak-69-bandarban-nilgiri

তো এবার সোজা গিয়ে থামলাম নীলগিরিতে.. এটা একটা একটা গোছানো ট্যুরিস্ট স্পট..  সামনে রাস্তার পাশে বাইক রেখে আমরা উপরে উঠলাম.. ওদের ক্যাফেতে চা-কফি, কেক, কলা দিয়ে নাস্তা চললো ভরপেট.. কেননা আজ পূর্বপরিকল্পনা মতো পেটে দানাপানি পড়বে খুব কম.. দুপুরে ভালোভাবে খাবার সুযোগ ও হবে না, আর রাতে কখন খাওয়া হবে তারও ঠিক নেই।

তাই আগেই সবাইকে বলা হয়েছিলো যে যার যার মতো শুকনো খাবার সাথে রাখতে আর একদিন প্রকৃতিতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার মানসিকতা রাখতে। হাহ হাহ হা.. খাবার দাবারের সাথে চললো আরো উপরের পাহাড়ের পাদদেশে হেটে বেড়ানো আর ছবি তোলা..

bandarban-nilgiri-hooligan-in-hill-track

পাহাড়ের কড়কড়ে ঠাঠা রোদ আমার গায়ের রঙই পুরো পাল্টে দিলো.. আমি কুটকুটে ফর্সা মানুষটা একেবারে ধবধবে কালো হয়ে গেলাম.. হাহ হাহ হা.. সত্যিই আমি এই বুনো পরিবেশটা চরম উপভোগ করছিলাম..

তো নীলগিরির ব্রেকের পর এবার হলো থানচির দিকে ডাইনহিল যাত্রা। নীলগিরি পর্যন্ত আমরা মোটামুটি আপহিল রাইড করে এসেছি আর এবার নামতে হবে.. গাইড জানালো পুরো রাস্তাই খাড়া ঢাল.. তাই হলো ছোট্ট আরেক রাউন্ড ব্রিফিং.. আমরা আবার সেই ভয়ঙ্কর সুন্দর খাড়া আর চুলের কাটার মতো বাঁকা রাস্তা বেয়ে নামতে শুরু করলাম..

bandarban-nilgiri-joe-outlaw

রাস্তা ভয়ঙ্কর সুন্দর আর বিপদজনক.. একপাশে খাড়ার উপর কিছুই নেই আর আরেকপাশে গায়ের উপর পাহাড় ঝুঁকে আছে.. কিছু কিছু জায়গাতো আবার গায়ের উপর খাড়া পাহাড়ের কারনে অন্ধকার হয়ে আছে আর বাতাস ভেজা স্যাঁতস্যাতে..

আর বাঁকগুলোতে আধাভাঙ্গা রাস্তার নুড়ি আর গোল গোল পাথরে বালিতে ভরা.. একটু বেকায়দা হলেই সামনের চাকা পিছলে যেতে পারে। তো একসময় খাড়া ডাউন হিল কমে গেল আমরা স্বাভাবিক পাহাড়ী পথে নেমে আসলাম। তো আবারো মটোজিপি টানাটানি শুরু হলো..

bandarban-nilgiri-down-hill-ride-saleh-june-johir

তো এখানে বলতে হয় আমরা মজা করে চালাচ্ছিলাম বটে তবে এখনকার পোলাপানদের মতো পহাড়ের পরিবেশ নষ্ট করে নয়.. বরং আমাদের চালানো ছিলো যথেষ্ট মার্জিত। আর সেই সাথে বেপরোয়া কোন এ্যাটিচ্যুডই আমাদের করোই মধ্যে ছিলোনা.. আর পাহাড়ের নিজস্ব পরিবেশের উপর সম্মান, অনুরাগ তো ছিলোই.. আর আজো আমরা এই বিষয়টা মনে রাখি ও মেনে চলি..

তো বালিপাড়া বলে এক ছোট আর্মি চেকপোস্টে এসে দেখলাম জুনভাই আর মারুফ ভাই এসে থেমেছে.. আমাকে বললো বাকিরা কোথায়.. আমি বললাম আমি জানি না.. যে যার যার মতো ছবিতোলা, শি দেয়া আর বিড়ি টানার জন্যে থেমে গেছে মনে হয়। সিরিয়াল মতো কেউই নেই.. ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। জুনভাই বললো আপনি টেনে সোজা চলে যান আর অল্প রাস্তা..!!

bandarban-nilgiri-joe-outlaw-june-shadiqullah

আহ! আমিতো এটাই চাচ্ছিলাম.. একা এই রাস্তায় চালানোর একটু সুযোগ.. লাইন ছাড়া আর একদম নিজের মতো করে.. হাহ হাহ হা.. তারপর আমাকে আর পায় কে.. আমার সামনে আর কেউই নেই.. রাস্তা পুরো ফাঁকা.. বিশাল নিশ্চুপ প্রকৃতির মাঝে আমি কেবল একলা আমার ফেজার নিয়ে..

আমার একশনক্যামটা অন করে পুরো ১৮কিমি রাস্তা আমি একটানে নিজের মতো করে চালিয়ে আসলাম.. অসাধারন একটা ভিডিও ক্লিপ পেলাম আমার এ্যাকশন ক্যামে.. এই পুরো রাস্তা প্রায় ফুটরেস্টে দাড়িয়ে বাইক চালিয়ে এসেছি.. আর পুরো পথে মনেহয় মাত্র কয়েকজন পথচলা মানুষ পেয়েছি.. আর পেয়েছি কেবল কয়েকটা উপজাতীদের বসতবাড়ি আর তাদের হাঁসমুরগি আর ছাগল..

balipara-bolipara-thanchi-bandarban-joe-outlaw

[ভিডিও: নীলগিরি থেকে বালিপাড়া হয়ে থানচি ]

তো থানচির ২-৩কিমি আগের আর্মিক্যাম্পের গেটে একজনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝলাম আমাদের আসার খবর তারা আগেই পেয়ে গেছে.. তাই আর না থেমে সোজা থানচিতে ঢুকে গেলাম.. আহ মনে হচ্ছিলো যেন অন্য এক প্রাচীন জনপদে ঢুকে পড়েছি..!

এখানে বলা দরকার যে থানচিতে ঢোকার আগে ছোট একটা বাঁকে একটা আপাত বিচ্ছিন্ন পার্শ্বরাস্তা ছিলো.. যেটা আজকের থানচি আলিকদমের রাস্তার মূল মুখ ছিলো। তখন রাস্তাটা পুরোপুরি ছিলোনা তবে স্থানীয় মানুষ কিছুটা পাকা রাস্তার পর পায়ে হাঁটা পথে নাকি চলতে পারতো..

thanchi-alikadam-road-intersection-thanchi-bandarban

পরে এই রাস্তাটা পুরোপুরি ডেভেলপ করে আজেকের হায়েস্ট মোটরেবল রোড থানচি আলিকদম রোড হয়.. তবে রোড হবার আগেই আমাদের অনেক সিনিয়র ট্রাভেলার হেটে, বাইক নিয়ে সেই বিপদসঙ্কুল কাঁচা পথ ডিঙ্গিয়েছে.. সত্যিই তাদের সাহস আর উৎসাহ অবাক করার মতোই..

(চলবে).. (Hooligan on Hill Track-পাহাড়ের পথে-৮)

One thought on “Hooligan on Hill Track-পাহাড়ের পথে-৭

Leave a comment